শীতকাল শেষ হতে যাচ্ছে আর সামনে আসতে চলেছে গ্রীষ্মকাল । আর আমরা সবাই জানি গ্রীষ্মকাল মানেই সূর্যকিরণের প্রখর তাপ । আর এই প্রখর তাপে বাইরে বেরোলে সূর্যকিরণ প্রথমেই প্রভাব ফেলে আমাদের ত্বকের উপর। সূর্যকিরণ আমাদের শরীরের সমস্ত অঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ত্বকের ক্ষতি করে।এই সূর্যকিরণের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি জিনিস আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য নষ্ট করার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা হলো ব্রন। কিন্তু আজকাল তরুন তরুণী, মধ্যবয়সী নারী ও পুরুষদেরও একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
(brono komanor upay)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যায়?
আপনি হয়তো ভাবছেন যে, কোনো কসমেটিক ব্রন দূর করার ক্রিম লাগিয়ে এটিকে ঠিক করা যেতেই পারে। কিন্তু আমি বলব এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করার জন্য ঘরোয়া সামগ্রীই সবচেয়ে ভালো আর নিরাপদ। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও(side-effects) থাকেনা। ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করতে একটু বেশি সময় লাগলেও কিন্তু নিয়মিত ব্যবহারে এবং কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে এই দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে। আমরা নিয়ে এসেছি তেমনি কিছু ঘরোয়া উপাদান যার মাধ্যমে আপনি ব্রণের মতো সমস্যা থেকে চির দিনের জন্য মুক্তি পেয়ে যাবেন। এবং আগামী দিনে আপনাকে আর কখনোই এই সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। তাই আর দেরি না করে আসুন জেনে নেয়া যাক।
প্রয়োজনীয় উপকরণ :
১: শশা
২: চাল
৩: মধু
৪: কাঁচা হলুদ
৫: চন্দন কাঠের গুঁড়ো
৬: আপেল
৭: মুলতানি মাটি
৮: তুলসী পাতা
৯: নিম পাতা
১০: কমলালেবু
১১: গোলাপজল
১২: পুদিনা পাতা
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
১: মুলতানি মাটি :- গরমের মৌসুমে ব্রন সাধারণত তাদেরই হয় যাদের ত্বকে তেলতেলে (oily) ভাব থাকে। এই তেলতেলে ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি খুব উপকারী। তেলতেলে ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে যা করতে হবে তা হল, মুলতানি মাটি জলের সঙ্গে মিশিয়ে paste করে মুখে লাগাতে হবে। মুলতানি মাটি ত্বকের অপ্রয়োজনীয়'তেল শোষণ করে নেয়, যার কারণে মুখে ব্রন উঠতে পারে না।
২: শশার রস :- শশার রস খুব তাড়াতাড়ি মুখের তেলতেলে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। আপনার মুখের তেলতেলে ভাব দূর করতে,
প্রথমত - শসার রস কিছুক্ষণের জন্য আপনার মুখে লাগিয়ে রেখে দিন। তারপর আস্তে আস্তে massage করুন।
দ্বিতীয়ত - আপনার মুখটিকে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফলস্বরূপ আপনি দেখতে পাবেন আপনার মুখ থেকে তেলতেলে(oily) ভাবটা উদাও হয়ে গেছে । এই পদ্ধতিটি আপনি প্রতিদিন অনুসরণ করতে পারেন।
৩: শসার স্ক্রাব :- শসার স্ক্রাব অনেকেই অনেক ভাবে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আপনার skin-এ যদি blackheads ও Whiteheads থেকে থাকে তাহলে,
প্রথমত - আপনি শসা ও চালের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ফেস প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। যদি আপনার এলার্জির সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি তার সঙ্গে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
দ্বিতীয়ত - এই ফেসপ্যাকটি আপনি সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন। এই ফেসপ্যাকটি আপনি নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দুটোই দূরের হয়ে।
মনে রাখার বিষয় : ব্রণ থাকলে স্ক্রাব করা যাবে না।
৪: কাঁচা হলুদ ও চন্দন কাঠের গুঁড়ো :- কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো এই দুটি উপাদানই ব্রণের জন্য খুবই উপকারি ।
প্রথমত- কাঁচা হলুদ বাটা ও সমপরিমাণ চন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রিত করে এতে মাপ মতো জল মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত- এখন যেখানে যেখানে ব্রনের উপস্থিতি দেখা যায়, সেই জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য লাগিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর, শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি ব্রণ এবং ব্রণের দাগ উভয়কেই দূর করতে সাহায্য করে।
৫: আপেল ও মধু :- আপেল এবং মধুর পেষ্ট ব্রণের দাগ দূর করার জন্য খুবই জনপ্রিয় ঘরোয়া উপায়। প্রথমত- আপেলের পেষ্ট তৈরি করে তাতে ৫-৬ ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিন।
দ্বিতীয়ত- মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিন এরপর,
তৃতীয়ত- আপনার মুখ থেকে ঠান্ডা জল দিয়ে খুব ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের টানটান ভাব দূর করে। এই মিশ্রণটি আপনি সপ্তাহে ৫-৬ বার ব্যবহার করতে পারেন। কয়েকদিনের মধ্যেই এর ফল পেয়ে যাবেন।
৬: তুলসী পাতার রস :- যাদের মুখে ব্রণ আছে তাদের জন্য তুলসী পাতার রস আশীর্বাদস্বরূপ । কারণ তুলসি পাতায় রয়েছে আয়ূর্বেদিক গুণ।
প্রথমত- তুলসি পাতার রস ব্রনের স্থানে লাগিয়ে রেখে দিন, তারপর যতক্ষণ না শুকিয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে করুন। তারপর,
দ্বিতীয়ত- কুসুম কুসুম গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৭: গোলাপজল :- প্রথমত- চন্দন কাঠের গুড়োঁর সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে নিন। এবং
দ্বিতীয়ত- এতে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। গোলাপজল যাদের ত্বকে(skin) শুট করে না। তারা সেই ক্ষেত্রে গোলাপ জলের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণ আপনার ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন। ফলস্বরূপ কয়েকদিনের মধ্যেই আপনি দেখতে পাবেন আপনার ত্বক আগের থেকে অনেক উজ্জ্বল হয়ে গেছে।
৮: কমলালেবু :- প্রথমত - কমলা লেবুর খোসা শুকিয়ে মিক্সার মেশিনে গুঁড়ো করে নিন।
দ্বিতীয়ত- মুসুরির ডাল ও চাল ভিজিয়ে ভালো করে পিষে পেস্ট বানিয়ে নিন।
তৃতীয়ত- ঐ পেস্টের মধ্যে চন্দন পাউডার, মুলতানি মাটি, কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
চতুর্থত:- মিশ্রণটি ১০-১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে দিন । তারপর জল দিয়ে ভাল করে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।এই প্যাকটা নিয়মিত মুখে লাগাতে থাকুন। ফলস্বরূপ আপনি দেখতে পাবেন আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা আগের থেকে অনেক গেছে। এবং ব্রণের দাগও দূর হয়ে গেছে।
৯:- নিম পাতা:- প্রথমত - ৫-৬টি নিম পাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে পিষে নিন। এর মধ্যে সামান্য পরিমাণে গোলাপজল ও এক চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন। যদি যদি দেখেন বেশি কারো হয়ে গেছে তাহলে আরও একটু গোলাপ জল ঢেলে দিন।
দ্বিতীয়ত - এই ফেসপ্যাকটি ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত মুখে লাগিয়ে রেখে দিন।
তৃতীয়ত - ফেসপ্যাকটি মুখের মধ্যে শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে মুখটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
১০: পুদিনা পাতা :- আমরা জানি গরমের দিনগুলিতে প্রচণ্ড চাপের কারণে ত্বকে যেসব ফুসকুড়ি এবং ব্রণ হয় থাকে এই সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য পুদিনা পাতা খুবই জরুরী এবং উপকারী। বিপন্ন ব ফুসকুড়ি থেকে মুক্তি পেতে আমাদের যা করতে হবে তাহলে,
প্রথমত - টাটকা (fresh) পুদিনা পাতা ভালো করে বেটে যে সমস্ত জায়গায় ব্রণ দেখা দিচ্ছে তার ওপর লাগিয়ে রেখে দিন।
দ্বিতীয়ত - ২০-২৫ মিনিট পর পরিষ্কার জল দিয়ে মুখটিকে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ফলস্বরূপ কয়েকদিনের মধ্যেই আপনি দেখতে পাবেন যে আপনার যে সমস্ত জায়গায় ফুসকুড়ি বা ব্রণ উঠে ছিল সেগুলো চিরতরে বিদায় নিয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ